♦ লাভ বেশি হওয়ায় বেড়েছে মৌসুমি ব্যবসায়ী ♦ কতিপয় অসাধু ব্যবসায়ীর কারণে আলুর দাম এত চড়া : ক্যাব সাধারণ সম্পাদক
দেশে আলুর বাজারে দৃশ্যমান কোনো সংকট নেই। পুরাতন আলুর মৌসুম শেষের দিকে হলেও নতুন আলুর সরবরাহ শুরু হয়েছে। রাস্তার মোড়ে মোড়ে আগের তুলনায় এখন ভ্যানে ফুটপাতে বরং মৌসুমি আলুর ব্যবসায়ী বেড়েছে। তার পরও আলুর দাম কমছে না। দাম কমাতে ভোক্তা অধিদপ্তর, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং বিভিন্ন জেলাপর্যায়ে গঠিত টাস্কফোর্স কমিটি বাজার মনিটর করছে। এর পরও দাম নিয়ে বিপাকে ভোক্তারা। আলুর দাম এখন আকাশচুম্বী। বাজারে প্রতি কেজি আলু ৭৫ টাকার নিচে মিলছে না। একটু ভালোমানের আলুর দাম আরও বেশি, অন্তত ৮০ টাকা। শুধু তাই নয়, ভোক্তাদের আমদানি করা আলুও কিনতে হচ্ছে দ্বিগুণ দামে। খুচরা ব্যবসায়ীরা জানান, বর্তমানে অন্য কোনো সবজির তুলনায় আলুতে বেশি লাভ হয়। তাই রাস্তার মোড়ে মোড়ে আলু বিক্রি হচ্ছে। আলুর দাম না কমার কারণ হিসেবে তারা বলেন, বন্যায় আলু উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তাই আলুর দাম বাড়তি রয়েছে। ক্রেতারা জানান, নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে একসময় আলুই ছিল গরিবের ভরসার জায়গা। কোনোমতে ভাতের সঙ্গে আলুর ভর্তা খেয়ে দিন পার করা যেত। তবে সিন্ডিকেট করে আলুর বাজার অস্থিতিশীল করা হয়েছে। ব্যবসায়ীরা কম দামে যেসব আলু আমদানি করে সেসব আলুও বাজারে ৭৫ টাকার নিচে মিলছে না। হাজার হাজার টন আলু আমদানি করে তারা বাজারে বেশি দামে বিক্রি করছে। এতে সরকার এবং ভোক্তারা প্রতারিত হচ্ছেন।
গত ৫ সেপ্টেম্বর জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এক প্রজ্ঞাপনে আলু আমদানিতে বিদ্যমান ২৫ শতাংশ শুল্ক কমিয়ে ১৫ শতাংশ নির্ধারণ করে। একই সঙ্গে আলু আমদানিতে যে ৩ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক আছে, তা সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করা হয়েছে। আলু আমদানিতে এ শুল্ক সুবিধা বহাল থাকবে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত। এসব সুবিধা নিয়ে আমদানি করা আলু বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৭৫ টাকায়। অর্থাৎ কম শুল্কে আলু আমদানিতে সুফলও পাচ্ছেন না সাধারণ মানুষ।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, ভারত থেকে আলু আমদানি করতে কেজিপ্রতি খরচ পড়ে ২১ টাকা ৩০ পয়সা থেকে ৬০ পয়সা। পরিবহন খরচ ও অন্যান্য খরচ এবং লাভসহ এই আলু ২৫ থেকে ২৮ টাকা বিক্রির কথা। আর পাইকারি হয়ে খুচরা পর্যায়ে একই আলু ভোক্তাপর্যায়ে ৩০-৩৫ টাকা হওয়ার কথা। কিন্তু এই আলুই ক্রেতা ৭৫ টাকা কেজি দরে কিনছেন। আর এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে আমদানিকারক ও ঢাকার শ্যামবাজারের আড়তদার সিন্ডিকেট। আমদানিকারকরা কমিশনের মাধ্যমে আড়তদারদের দিয়ে আলু বিক্রি করায়। এতেও আলুর দামে বড় প্রভাব বলে অভিযোগ আছে।
সরকারের ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ সর্বশেষ তথ্যমতে, বাজারে প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৭৫ থেকে ৮৫ টাকায়। গত সপ্তাহে ছিল ৬৫ থেকে ৭৫ টাকা। এক মাস আগে যা ছিল ৫৫ থেকে ৬০ টাকা। কৃষি বিপণন অধিদপ্তর জানায়, ভোক্তা পর্যায়ে আলুর যৌক্তিক দাম ৪৬ টাকা। তাদের মতে, বর্তমানে বাজারে প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা। শুল্ক কমানোর আগে এ আলু বিক্রি হয়েছে ৫০ থেকে ৬০ টাকায়। এক মাস আগেও আলু বিক্রি হয়েছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা। আর গত বছরের এ সময় আলুর দাম ছিল ৪০ থেকে ৪৫ টাকা।
এদিকে, কতিপয় অসাধু ব্যবসায়ীর কারণে আলুর দাম এত চড়া বলে জানিয়েছেন কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট হুমায়ুন কবীর ভূঁইয়া। তিনি বলেন, অসাধু ব্যবসায়ীদের কারণে আলুর দাম এত বেড়েছে। তারা আলু পরিচয়ে নদীতে ফেলে দেয় তার পরও কম দামে আলু বিক্রি করছে না। অসাধু আলু ব্যবসায়ীরা সারা দেশের মানুষকে জিম্মি করে রেখেছে। তারা মনে করছে ৭৫ টাকা আলু বিক্রি করলে দ্বিগুণ লাভ থাকে। সুতরাং কিছু আলু নষ্ট হলেও তাদের লোকসান নেই। এ ক্ষেত্রে সরকারের সব প্রতিষ্ঠান সহযোগিতা করছে বলে আমরা মনে করি না। সরকারের সব সংস্থা যদি বাজার মনিটরিং ঠিকমতো করত তাহলে এত বাড়ার সুযোগ পেত না।