কিশোরগঞ্জের ভৈরবের শ্রীনগর ইউনিয়নের ভবানীপুর এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের সংঘর্ষে মিজান মিয়া (৪৫) নামে একজন টেঁটাবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া সংঘর্ষে দুই পক্ষের অন্তত ৩০-৩৫ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
শুক্রবার (১৮ এপ্রিল) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। নিহত মিজান মিয়া ভবানীপুরের সুলাইমানপুর মহল্লার রবিউল্লাহর ছেলে। তিনি উপজেলার শ্রীনগর ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্যসচিব ছিলেন।
গুরুতর আহতরা হলেন- দুধু মিয়া (৩২), অপু মিয়া (২৪), পাপ্পু (২২) ও আক্তার মিয়া (৩০)। এ ছাড়া আরও কয়েকজন আহত হয়ে ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিয়েছেন।
বৈঠকে কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে দুই পক্ষ দুদিকে অবস্থান নেয়। পরে বেলা ১১টার দিকে ভবানীপুরে বিবদমান দুটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে লিপ্ত হয় অন্তত তিন শতাধিক মানুষ।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, এ সংঘর্ষে বুদর গোষ্ঠীর পক্ষে নেতৃত্ব দেন শ্রীনগর ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান হারুনুর রশিদ, জয়নুদ্দিন সরকার, বাশার মেম্বার ও আজিজুল হক। অপর পক্ষে ময়দর মুন্সীবাড়ি, কামালের বাড়ি ও দেইলার বাড়ির নেতৃত্ব দেন মো. মাসুম মিয়া, আতর মিয়া, মো. হারুন ও মোক্তার হোসেন। সংঘর্ষে ময়দুর মুন্সীর বাড়ির বংশের সুলাইমানপুরের মিজান মিয়া টেঁটাবিদ্ধ হন। পরে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ছাড়া বুদর গোষ্ঠীর পক্ষে আকবর, সালাম ও সোহাগ, ময়দর গোষ্ঠীর বাসার ও বাবুল গুরুতর আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
নিহতের ফুফাতো ভাই পারভেজ বলেন, মৌটুপির সংঘর্ষের ঘটনাকে কেন্দ্র করে মিজান মিয়া ও বাদশা মেম্বার ঝগড়া করলে এলাকার চেয়ারম্যানসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিরা ঘটনাটি মীমাংসা করতে আজ সালিশে বসেন। এ সময় উত্তেজিত হয়ে দুই পক্ষের লোকজন সংঘর্ষ শুরু করে। প্রতিপক্ষের আঘাতে আমার মামাতো ভাই মিজান নিহত হন।
এ বিষয়ে শ্রীনগর এলাকার সাবেক চেয়ারম্যান মো. ওসমান গনি বলেন, মৌটুপি গ্রামের বিরোধ আমাদের গ্রামে এসে পড়ল। আমরা চেয়েছিলাম মৌটুপির বিরোধ যেন আমাদের গ্রামে না হয়। কিন্তু, সালিশের সময় দুই পক্ষ সংঘর্ষে লিপ্ত হলে এমন ন্যাক্কারজক ঘটনাটি ঘটে।
স্থানীয় চেয়ারম্যান মো. হারুনউর রশিদ বলেন, যদি জানতাম এ ঘটনা ঘটবে তবে আজ সালিশের ব্যবস্থা করতাম না। দুই পক্ষই উগ্র। মৌটুপি গ্রামের বিবাদ ঝগড়া এখন আমাদের গ্রামে ছড়িয়ে পড়ল। মিজানের নিহত হওয়ার ঘটনাটি দুঃখজনক।
ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. কিশোর কুমার বলেন, আমাদের এখানে মিজান মিয়াকে মৃত অবস্থায় পাই। নিহতের মরদেহ দুপুর ১টার দিকে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। আরও অনেকেই আহত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন।
সহকারী পুলিশ সুপার (ভৈরব সার্কেল) নাজমুস সাকিব ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, দুই গোষ্ঠীর সংঘর্ষের খবর পেয়ে সেনাবাহিনী ও পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করে। এখন পর্যন্ত আমরা মিজান মিয়া নামের একজন নিহতের সংবাদ পেয়েছি। এ ছাড়া পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে এলাকায় অতিরিক্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মোতায়েন রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যাতে অবনতি না হয় সে বিষয়ে কাজ চলছে। এনএসআই গোয়েন্দা তথ্যে কাজ চলমান।
প্রসঙ্গত, বুধবার (১৬ এপ্রিল) উপজেলার সাদেকপুর ইউনিয়নের মৌটুপি গ্রামের বর্তমান চেয়ারম্যান সাফায়েত উল্লাহ ও সাবেক চেয়ারম্যান তোফাজ্জল সমর্থকদের মাঝে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়। এ সময় ভবানীপুর থেকে দুটি পক্ষ মৌটুপি গ্রামের ঝগড়ায় মৌন সমর্থন করে সাফায়েত ও তোফাজ্জলের পক্ষে অবস্থান নেয়। এ বিষয় নিয়ে আজ শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে ভবানীপুর চক বাজারে সালিশি বৈঠক বসে।
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোঃ সোহেল মিয়া সরকারি, সম্পাদক : শামীম, বার্তা সম্পাদক : ইসমত প্রধান উপদেষ্টা : মোঃ পিন্টু
ঠিকানা : ২২৪ / ১ ফকিরাপুল, মতিঝিল ঢাকা-১০০০ মোবাইল : ০১৭৬৫৮৯৪১৭১