কুমিল্লার বুড়িচংয়ে ট্রেনে কাটা পড়ে নিহত তিনজনের মধ্যে সাইফুল (১৮) নামে একজনের পরিচয় শনাক্ত করা হয়েছে। এছাড়া তুহিন (১৯) নামে একজনের শুধু নাম জানা গেছে। অপর একজনের বাড়ি চট্টগ্রাম, কিন্তু তার নাম-পরিচয় জানা যায়নি। তারা তিনজনই ভবঘুরে ছিলেন।
পরিচয় শনাক্ত হওয়া সাইফুল ইসলাম দেবিদ্বার উপজেলার দেবিদ্বার পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মোখলেছুর রহমান এবং আসমা বেগম দম্পতির একমাত্র ছেলে। সহায়-সম্বলহীন ওই পরিবারটি কুমিল্লা রেলওয়ে স্টেশনের পাশে একটি ঝুপড়ি ঘরে বসবাস করেন। মোখলেছুর রহমান এবং আসমা বেগম রেলস্টেশনে ভিক্ষা করে জীবিকা নির্বাহ করেন। একমাত্র ছেলে সাইফুল আগে রংমিস্ত্রির কাজ করতেন। মাদকাসক্ত হওয়ার পর থেকে তিনি রংমিস্ত্রির কাজ ছেড়ে দিয়ে টোকাই হয়ে যায়। স্টেশন ও রেললাইনের পাশে বোতলসহ বিভিন্ন পণ্য টোকাই করে সেগুলো বিক্রি করে নেশায় মত্ত থাকতেন সাইফুল। সাইফুলসহ নিহত অপর দুইজন বন্ধু ছিলেন।
নিহত সাইফুলের বাবা মোখলেছুর রহমান জানান, দেবিদ্বার পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডে তাদের পৈতৃক ভিটা ছিল। কিন্তু অভাবের তাড়নায় সেই ভিটা বিক্রি করে দিয়ে দেবিদ্বার ছেড়ে কুমিল্লায় আসেন তারা। পরে কুমিল্লা রেলওয়ে স্টেশনের পাশে একটি ঝুপড়ি ঘর বানিয়ে সেখানে বসবাস শুরু করেন বছর দশেক আগে।
তিনি জানান, কুমিল্লা রেলওয়ে স্টেশনে ভিক্ষাবৃত্তি করে সংসার চলে তাদের। তাদের একমাত্র ছেলে সাইফুল আগে রংমিস্ত্রির কাজ করতো। এর মধ্যে রেলস্টেশনে কিছু ভবঘুরে ছেলের সাথে মিশতে শুরু করে। একপর্যায়ে মাদকের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে সাইফুল। মাদকাসক্ত হওয়ার পর থেকে রংমিস্ত্রির কাজ ছেড়ে দিয়ে ভবঘুরে জীবন শুরু করে সাইফুল। বোতল কুড়িয়ে সেগুলো বিক্রি করে যা রোজগার হতো তা দিয়ে নেশা করতো সে।
সাইফুলের বাবা বলেন, নিহত তিনজন খুব ভালো বন্ধু ছিল। তিনজনই বোতল কুড়িয়ে নেশা করতো। তাদের মধ্যে একজনের নাম তুহিন। কিন্তু তুহিনের নাম ছাড়া কিছুই জানেন না তিনি। অপরজনের মুখ পরিচিত ছিল। চট্টগ্রাম তার বাড়ি। কিন্তু নাম বা বাবার নাম এসব জানা নেই তার।
তিনি জানান, বুধবার রাত ১১টার দিকে ঘরে ভাত খেয়ে বের হয়ে যায় সাইফুল। বোতল কুড়াতে কুড়াতে কোন দিকে চলে যায় সেটা তিনি জানেন না। আজ (বুধবার) সকালে ছেলের মৃত্যুর খবর পান তিনি। ছেলেকে কবর দেওয়ার জায়গাটুকুও নেই তাদের। তাই পুলিশকে অনুরোধ করেছেন অন্য জায়গায় দাফন করে দিতে।
কুমিল্লা রেলওয়ে স্টেশন পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ (আইসি) সোহেল মোল্লা ঢাকা পোস্টকে বলেন, নিহত তিনজনই বোতল কুড়িয়ে ভবঘুরে জীবনযাপন করতেন। তারা তিনজনই মাদকাসক্ত ছিলেন। ধারণা করা হচ্ছে মাদক সেবন করে রেললাইনে বসেছিলেন তিনজন। এ সময় উদয়ন এক্সপ্রেস ট্রেনে কাটা পড়ে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তাদের।
তিনি আরও বলেন, উদয়ন এক্সপ্রেস ট্রেনে কাটা পড়ে তিনজন নিহতের ঘটনায় লাকসাম রেলওয়ে থানায় (জিআরপি) থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা করা হয়েছে। নিহতদের মরদেহ ময়নাতদন্তের কাজ চলছে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সিআইডি এবং পিবিআই আঙুলের ছাপ নিয়ে পরিচয় শনাক্তের কাজ করছে। সাইফুলসহ পরিচয় না পেলে অপর দুইজনকে বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করা হবে।
কুমিল্লা রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা মো. লিয়াকত আলী ঢাকা পোস্টকে বলেন, জিআরপি পুলিশ ঘটনার তদন্ত করছে। ঘটনার সময় ঘটনাস্থলে কেউ ছিলেন না। কারও কোনো সাক্ষ্য পাওয়া যায়নি। যেহেতু রাতের কোনো এক সময় ঘটনাটি ঘটেছে সেহেতু পুলিশের তদন্ত ছাড়া জানার কোনো উপায় নেই।
রেলওয়ে থেকে কোনো তদন্ত কমিটি হবে কিনা এ প্রশ্নের জবাবে রেলওয়ের এই কর্মকর্তা বলেন, আপাতত কোনো তদন্ত কমিটি হচ্ছে না। সিদ্ধান্ত হলে পরে জানানো হবে।
প্রসঙ্গত, বুধবার ভোর ৪টা থেকে সাড়ে ৪টার দিকে ট্রেনে কাটা পড়ে তিন যুবকের মৃত্যু হয়েছে।
কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার মাধবপুর এলাকায় রেললাইনের পাশে ট্রেনে কাটা পড়া তিনজনের ক্ষতবিক্ষত মরদেহ পড়ে থাকতে দেখে পুলিশকে খবর দেন স্থানীয়রা। এদিন সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ঘটনাস্থলে যায় রেলওয়ে পুলিশ (জিআরপি)। পুলিশ মরদেহগুলো উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়।
Leave a Reply