চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্য সচিব লায়ন হেলাল উদ্দিনের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস ও দলীয় নেতাদের ওপর হামলার অভিযোগে মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছে দলটির নেতাকর্মীরা।
বুধবার (২৩ এপ্রিল) চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে সহস্রাধিক নেতাকর্মী জড়ো হয়ে এ কর্মসূচি পালন করেন। এতে একাত্মতা পোষণ করেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।
এ সময় বক্তারা দাবি করেন, লায়ন হেলাল পদ-পদবির অপব্যবহার করে আনোয়ারায় এক সন্ত্রাসীবাহিনী গড়ে তুলেছেন। তার নেতৃত্বে গাজী ফুরকান, নুরুল কবির রানা, মামুন খান ও ইসমাইল বিন মনিরসহ একাধিক গ্যাং চাঁদাবাজি, ইয়াবা ব্যবসা, জমি দখল, বালু উত্তোলন ও ছিনতাইয়সহ নানা অপকর্মে লিপ্ত রয়েছে। হেলাল ও তার বাহিনী প্রশাসন, ভূমি অফিস, সাব-রেজিস্ট্রি অফিসসহ বিভিন্ন দপ্তরে নিয়মিত মাসোহারা তোলেন। তারা বিএনপির নাম ব্যবহার করে আওয়ামীপন্থী সন্ত্রাসীদেরও পুনর্বাসন করে এক নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে।
মানববন্ধনে একাত্মতা পোষণ করে বক্তব্য রাখেন সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের আহ্বায়ক ও সিনিয়র সাংবাদিক জাহিদুল করিম কচি। তিনি বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশনা হচ্ছে, কোনো সন্ত্রাসী কার্যক্রমকে প্রশ্রয় দেওয়া যাবে না। কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে চট্টগ্রামের রাউজান, রাঙ্গুনিয়া ও আনোয়ারায় ব্যাপক হানাহানির খবর পাওয়া যাচ্ছে। বিশেষ করে আপনারা যার বিরুদ্ধে আজ মানববন্ধন করছেন তাকে একটি বিশেষ মহল দলীয় চেয়ারে বসিয়েছে। তার বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ আমাদের কাছে জমা হয়েছে। তার মতো যারা চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি ও সন্ত্রাসের মাধ্যমে বিএনপিকে কলুষিত করতে চায়, তাদের দল থেকে বহিষ্কার ও প্রতিহত করতে। আমি আনোয়ারাবাসীকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই সন্ত্রাসী কার্যক্রমকে প্রতিহত করার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি। এক্ষেত্রে গণমাধ্যমকর্মীরা আপনাদের পাশে থাকবে।
বিএনপি নেতারা বলেন, সম্প্রতি পারকি চরের বেড়িবাঁধ প্রকল্পে চাঁদাবাজির ঘটনায় আনোয়ারা উপজেলা বিএনপির সিনিয়র সদস্য গফুর সওদাগর ও সাবেক চেয়ারম্যান হাসান চৌধুরী বাধা দিলে, তাদের ওপর হামলা চালায় হেলাল বাহিনী। একপর্যায়ে গফুর সওদাগরকে মারধর ও তার গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। পরবর্তীতে থানায় মামলা করতে গেলে গভীর রাতে আবারো হামলা চালিয়ে পুলিশসহ নেতাদের ওপর আক্রমণ করে এবং যানবাহনে অগ্নিসংযোগ করে। ঘটনার জেরে ৭ জন গ্রেপ্তার করা হলেও মূল হোতা কালা হেলাল ও তার প্রধান সহযোগীরা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে।
বিএনপি নেতারা অভিযোগ করে বলেন, লায়ন হেলালের বিরুদ্ধে বিএনপি নেতা জামাল উদ্দিনকে হত্যা, আনোয়ারা উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির আনছার চেয়ারম্যান ও দক্ষিণ জেলা যুবদলের সহ-সভাপতি রফিকুল ইসলাম খোকাকে ছুরিকাঘাত, বিএনপির সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা প্রয়াত অ্যাডভোকেট কবির চৌধুরী ও সাবেক সংসদ সদস্য সরওয়ার জামাল নিজামকে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও তাকে দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্য সচিবের মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
সদস্য সচিব হওয়ার পর হেলাল আনোয়ারায় বিএনপি নেতাদের ওপর হামলা, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি ও সন্ত্রাসের মাধ্যমে এলাকা অশান্ত করে তুলেছে। এ ঘটনাগুলো তদন্ত করে লায়ন হেলালকে দল থেকে বহিষ্কার করার জন্য আমরা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে দাবি জানাচ্ছি।
এ সময় বক্তারা ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়ে বলেন, হেলাল ও তার গ্যাংকে গ্রেপ্তার ও দল থেকে বহিষ্কার করা না হলে, আনোয়ারায় আরও বৃহত্তর কর্মসূচির ডাক দেওয়া হবে।
মানববন্ধনে আনোয়ারা উপজেলা বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল, সেচ্ছাসেবকদল, শ্রমিকদল নেতারা উপস্থিত হয়ে দাবি তোলেন, সন্ত্রাসের গডফাদার কালা হেলাল গং এর শাস্তি চাই, শান্তি চাই, নিরাপদ আনোয়ারা চাই।
আনোয়ারা উপজেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি মোহাম্মদ হাছান চেয়ারম্যানের সভাপতিত্বে এতে বক্তব্য রাখেন, উপজেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক মনজুর উদ্দিন চৌধুরী, আহ্বায়ক কমিটির সদস্য এডভোকেট ফৌজুল আজিম, সাবেক সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির আনছার, সাবেক সহ-সভাপতি সাইফুল ইসলাম, বিএনপি নেতা মোজাম্মেল হক ভিপি, মোহাম্মদ আলমগীর, আনোয়ারা উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক মোহাম্মদ হারেচ, সদস্য সচিব মোহাম্মদ ফারুক, অ্যাডভোকেট অহিদুল ইসলাম, জসিম উদ্দিন ও আবু তাদের।
Leave a Reply