চট্টগ্রাম-মংলা বন্দরের সঙ্গে সড়ক পথে যোগাযোগের লক্ষ্যে পাঁচ বছর আগে অনুমোদন হয়েছিল শরীয়তপুর-চাঁদপুর আঞ্চলিক মহাসড়ক নির্মাণ প্রকল্প। কিন্তু জমি অধিগ্রহণে জটিলতার কারণে ৩৫ কিলোমিটার সড়কটির ২৯ কিলোমিটারের কাজ বন্ধ থাকায় জনমনে সৃষ্টি হয়েছে নানান প্রশ্ন। বছরের পর বছর পার হলেও জমি অধিগ্রহণ সম্পন্ন না হওয়াতে সড়কটি সম্পন্ন হবে কি না তা নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা।
শরীয়তপুরের সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম-মংলা বন্দরের সঙ্গে সড়ক পথে যোগাযোগ স্থাপনের লক্ষ্যে ২০১৯ সালে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় ৩৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে চার লেনের শরীয়তপুর-চাঁদপুর আঞ্চলিক মহসড়ক নির্মাণের একটি প্রকল্প অনুমোদন করে। এ মহাসড়কটি শরীয়তপুর, মাদারীপুরসহ দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলার সঙ্গে চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দরকে সংযুক্ত করবে। এতে শুধু এসব অঞ্চলের সড়ক যোগাযোগের সহজ সুযোগই পথই তৈরি হবে না বরং পোর্ট টু পোর্ট সংযুক্তির ফলে দেশের অর্থনৈতিক সম্ভাবনাকেও করবে গতিশীল। কিন্তু বছরের পর বছর পাড় হলেও ৬ কিলোমিটার অংশের কাজ চলমান থাকলেও জমি অধিগ্রহণ সম্পন্ন না হওয়ায় ২৯ কিলোমিটারের কাজ বন্ধ রয়েছে।
সওজ সূত্রে আরও জানা যায়, ২০১৯ সালে শরীয়তপুর সদরের মনোহর বাজার থেকে ভেদরগঞ্জ উপজেলা সংলগ্ন চাঁদপুরের ইব্রাহিমপুর ফেরিঘাট পর্যন্ত ৩৫ কিলোমিটার মহাসড়কটি সম্প্রসারণ, মজবুতকরণ, সার্ফেসিং ও ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণের জন্য ৩টি প্যাকেজে প্রকল্প অনুমোদন দেয় সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়। ২০২১ সালে তিনটি প্যাকেজে কাজ করার জন্য কার্যাদেশ প্রদান করা হলেও জমি অধিগ্রহণ সম্পন্ন না হওয়ায় ঠিকাদার কাজ শুরু করতে পারেনি। এর মধ্যে মাত্র ৬ কিলোমিটার অংশের কাজ চলমান রয়েছে। জমি বুঝে না পেয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ২৯ কিলোমিটারের কাজ শুরু করতে না পারায় ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে মন্ত্রণালয় সেই কার্যাদেশ বাতিল করে। সর্বশেষ ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে নতুন করে সর্বশেষ মোট ৮৬৮ কোটি টাকা ব্যয়ে দরপত্র আহ্বান করে মূল্যায়নের জন্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। অফিস সূত্র আরও জনা যায়, বাড়তি ব্যয় মেটাতে ডিপিপি সংশোধনেরও প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
ভেদরগঞ্জ উপজেলার পমলাকার্তা গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা দেলোয়ার হোসেন বাবুল খান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ২০০১ সালে শরীয়তপুর-চাঁদপুর আঞ্চলিক মহাসড়কটি চালু হওয়ার পর থেকেই খানা-খন্দের কারণে খুলনা-চট্টগ্রামের যাত্রীবাহী ও পণ্যবাহী যানবাহন ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে। ২০২১ সালে সরকার মহাসড়কটির কাজ শুরু করায় আমাদের মধ্যে আশার সঞ্চার হয়েছিল। কিন্তু চার বছরেও তেমন অগ্রগতি না হওয়ায় আমরা এখন হতাশায় ভুগছি। তারপর বর্তমান সরকারের ব্যয় সংকোচন নীতির কারনে আদৌ সড়কটি বাস্তবায়ন হবে কিনা তা নিয়েও শঙ্কায় আছি।
চরভয়রা উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক আলী হোসেন মাদবর বলেন, মহাসড়ক চালু হওয়ার পর থেকেই এই রাস্তা দিয়ে ভারী যানবাহন চলাচল শুরু হয়। তার পর থেকেই আমরা চরম ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছি। বৃষ্টির মৌসুমে সড়কটি মরণ ফাঁদে পরিণত হয়। চার লেনের কাজ শুরু হয়েছে শুনে আমরা যারপর নাই আনন্দিত হয়েছিলাম। কিন্তু কাজ শুরু হওয়ার চার বছরেও তেমন অগ্রগতি না হওয়ায় সড়কটি এখন চলাচলের প্রায় অনুপযোগী হয়ে গেছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন, যাতে দ্রুত এই সড়কটির কাজ শেষ করে আমাদের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সড়ক যোগাযোগ নিরবিচ্ছিন্ন করে অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ তৈরি করে দেয়।
শরীয়তপুর সুপার সার্ভিসের আন্তজেলা বাস চালক হানিফ মৃধা ঢাকা পোস্টকে বলেন, ৩০ বছর যাবত বাস ও ট্রাকের চালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। শরীয়তপুর ছাড়া বাংলাদেশের আর কোন জেলার মহাসড়কের অবস্থা এত খারাপ দেখি নাই। বিশেষ করে শরীয়তপুর-চাঁদপুর মহাসড়ক এখন যানবাহন চলাচলের প্রায় অনুপযোগী। যাত্রীদের যেমন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলতে হয় চালকদের ঝুঁকি তার চাইতে অনেক বেশি। ভারী পণ্যবাহী ট্রাক হলে তো কথাই নেই। শুধু গাড়ির যন্ত্রাংশই ভাঙ্গেনা আমাদের শারীরিক সমস্যাও বেড়ে যায়।
শরীয়তপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শেখ নাবিল হোসেন ঢাকা বলেন, জমি অধিগ্রহণের জন্য বাড়তি ব্যয় ও রিটেন্ডার প্রক্রিয়ার কারণে ৩৫ কিলোমিটার আঞ্চলিক মহাসড়কের ৬ কিলোমিটারের কাজ চলমান রয়েছে। বাকি ২৯ কিলোমিটারের কাজ বাস্তবায়নের জন্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী রিটেন্ডার আহ্বান প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। আশা করছি সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন শেষে প্রকল্পটির সফল বাস্তবায়নে সক্ষম হব।
Leave a Reply