ময়মনসিংহে অভিযান চালিয়ে বিদেশি পিস্তলসহ বিপুল অস্ত্র ও মাদক উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় নৈশপ্রহরীর স্ত্রী ফারজানা শান্তাকে আটক করেছে পুলিশ।
রোববার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে নগরীর মাসকান্দা এলাকায় মৎস্য বীজ উৎপাদন কেন্দ্রের পাশে স্টাফদের থাকার রুম থেকে তাকে আটক করা হয়। এ সময় হৃদয় মিয়া ও তন্ময়সহ অজ্ঞাতনামা আরও ২ জন পালিয়ে যায়। তাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ও মাদকের পৃথক দুটি মামলা হয়েছে।
সোমবার (২৩ ডিসেম্বর) দুপুরে কোতোয়ালি মডেল থানায় কনফারেন্স রুমে রেঞ্জ ডিআইজি আশরাফুর রহমান প্রেস ব্রিফিংয়ে জানান, বাংলাদেশে একটি পরিবর্তীত পরিস্থিতি বিরাজ করছে। ৫ আগস্টের পর দেশে বিভিন্ন থানা থেকে পুলিশের চার শতাধিক অস্ত্র লুটপাট ও চুরি হয়েছে। সে সময় ফ্যাসিস্ট রাজনৈতিক দলের হেলমেট বাহিনী সেসব অস্ত্র ও হাতিয়ার নিয়ে জনসাধারণের ওপর আক্রমণ করেছিল। সেসব সরঞ্জামগুলো এখনো বিভিন্ন জায়গায় লোকায়িত অবস্থায় রয়েছে। সেগুলোর ব্যাপারে তদন্ত চালানো হচ্ছে। এ অস্ত্রগুলো দিয়ে এ ধরনের ঘৃণ্য কাজে ব্যবহৃত হয়েছে কিনা এগুলো পরীক্ষা করা হচ্ছে। এ ঘটনায় যারা জড়িত তাদের সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে। এ সময় পুলিশ সুপার কাজী আখতার উল আলম, কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি শফিকুল ইসলাম খান, ওসি তদন্ত সাইফুল ইসলামসহ পুলিশ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
আটক নৈশপ্রহরীর স্ত্রী ফারজানা ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার পাগলা থানার নীগুয়ারী এলাকার স্বপন খানের মেয়ে। তার স্বামী হৃদয় মিয়া ময়মনসিংহের পাগলা থানাধীন নীগুয়ারী গ্রামের বাসিন্দা। তিনি চাকরির সুবাদে স্ত্রীকে নিয়ে সরকারি এই খামারে থাকতেন।
পুলিশ ওই রুম থেকে একটি নাইন এমএম বিদেশি পিস্তল, একটি কাঠের বাটযুক্ত পুরাতন বিদেশি পিস্তল, একটি পুরাতন ম্যাগজিন, একটি এয়ারগান, ১৩০ পিস সিসা গুলি, একটি টেলিস্কোপ, একটি সামুরাই, একটি সুইচগিয়ার চাকু, দুটি চাইনিজ কুড়াল, তিনটি দেশীয় চাইনিজ কুড়াল, দুটি চাপাতি, ১০টি রামদা, ৬টি চাকু, একটি বড় ছুরি, একটি ঢেগার, ৬০ বোতল বিদেশি মদ, ৫ বোতল ফেনসিডিল ও একটি মোটরসাইকেল উদ্ধার করে।
পুলিশ জানায়, রোববার মধ্যরাতে অস্ত্র ও মাদক কেনাবেচার তথ্য পেয়ে তাৎক্ষণিক ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের নগরীর মাসকান্দা ফিসারি এলাকায় চেকপোস্ট বসিয়ে অভিযান চালানো হয়। পুলিশের চেকপোস্ট দেখে মোটরসাইকেল রেখে তিন আরোহী দৌড়ে পালায়। এ সময় তারা দেয়াল টপকে মৎস্য বীজ উৎপাদন কেন্দ্রে ঢুকে পরে। সেখানে স্টাফদের থাকার রুম থেকে চারজনকে পালাতে দেখা যায়। তখন ওই রুমের অস্থায়ী গার্ড হৃদয়ের স্ত্রী ফারজানা শান্তাকে জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে সে স্বীকার করে তার স্বামী হৃদয় ও তন্ময়সহ আরও কয়েকজন মিলে স্টাফদের রুমে ঢুকেছিল।
পরে ফারজানা শান্তাকে নিয়ে স্টাফদের থাকার রুম এবং তার নিজের রুমে তল্লাশি চালানো হয়। সেখান থেকে দুটি বিদেশি পিস্তল, বিপুল পরিমাণ দেশীয় অস্ত্র ও মাদক উদ্ধার করা হয়। তারা মৎস্য খামারে চাকরির পাশাপাশি অস্ত্র ক্রয়-বিক্রয়সহ নেশা জাতীয় মাদক দ্রব্য ক্রয়-বিক্রয় করে থাকে বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ফারজানা শান্তা স্বীকার করে।
কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সফিকুল ইসলাম বলেন, আসামিদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ও মাদকের পৃথক দুটি মামলা করা হয়েছে। মামলা দুটি তদন্তাধীন। নৈশপ্রহরী হৃদয় মিয়াকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। এছাড়া চক্রটির সঙ্গে যারা জড়িত তাদের সবাইকে আইনের আওতায় আনতে চেষ্টা চলছে।
সরকারি মৎস্য বীজ উৎপাদন খামারের ব্যবস্থাপক হাছেন আলী বলেন, এসব বিষয়ে আমার কিছুই জানা নেই। এখানে অস্ত্র ও মাদক কেনাবেচা হলেও আমি কখনই কিছু টের পাইনি। এই চক্রের সঙ্গে জড়িতের গ্রেফতারের দাবি জানান তিনি।
Leave a Reply