1. shadhinsomoy.com@gmail.com : স্বাধীন সময় : স্বাধীন সময়
  2. info@www.shadhinsomoy.com : স্বাধীন সময় :
বুধবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৫, ০৪:৩১ অপরাহ্ন

হজরত ঈসা আ. ইঞ্জিল কিতাব পেয়েছিলেন যেভাবে

  • Update Time : বৃহস্পতিবার, ১৩ মার্চ, ২০২৫
  • ২৪ Time View

মানবজাতির ইতিহাসে যুগে যুগে আল্লাহ তায়ালা নবীদের মাধ্যমে হেদায়াতের জন্য আসমানি কিতাব নাজিল করেছেন। তাওরাত, যাবুর, ইঞ্জিল,কোরআন— এই চারটি কিতাবের মধ্যে ইঞ্জিল নাজিল হয়েছিল মানবতার মুক্তিদূত হজরত ঈসা আ.-এর ওপর। এটি ছিল একটি মহাসংবাদের বার্তা, যেখানে সত্য ও হেদায়াতের  আহ্বান উচ্চারিত হয়েছিল।

হজরত ঈসা আ.—এক অসাধারণ নবীর আবির্ভাব

হজরত ঈসা আ. ছিলেন আল্লাহর এক বিশেষ রহমত, যার জন্মই হয়েছিল অলৌকিকভাবে। তাঁর মা মরিয়ম আ.-এর কোনো স্বামী ছিলেন না, অথচ আল্লাহ তায়ালার ইচ্ছায় তিনি এক পুত্রসন্তানের জন্ম দেন। কোরআনে বর্ণিত হয়েছে—

নিশ্চয়ই আল্লাহর কাছে ঈসার দৃষ্টান্ত আদমের মতো। তাকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর তাকে বললেন, ‘হয়ে যাও’ সে হয়ে গেল। (সূরা আলে ইমরান, আয়াত : ৫৯)

শৈশব থেকেই হজরত ঈসা আ.-এর মধ্যে নবুওয়তের আলামত প্রকাশ পেতে থাকে। তিনি দোলনায় থাকাবস্থায়ই কথা বলেন , তাঁর মা মরিয়ম আ.-এর সতীত্ব প্রমাণ করেন।

ইঞ্জিল— এক মহাসংবাদের বার্তা

হজরত ঈসা আ.-এর ওপর নাজিলকৃত কিতাবের নাম ইঞ্জিল। ‘ইঞ্জিল’ শব্দটি মূলত গ্রিক ভাষা থেকে এসেছে, যার অর্থ ‘সুসংবাদ’ বা ‘গুড নিউজ’।

এটি ছিল বনী ইসরাইলের জন্য এক নতুন আলোর দিগন্ত, যা তাদেরকে তাওরাতের কঠোর বিধানের পরিবর্তে দয়ার বার্তা শোনায়। আল্লাহ বলেন—

আমি তাকে (ঈসা আ.) ইঞ্জিল দান করেছি, যাতে রয়েছে হেদায়াত ও নূর , এটি তার পূর্ববর্তী কিতাব তাওরাতের সমর্থনকারী। এটি মুত্তাকীদের জন্য হেদায়াত ও উপদেশ। (সূরা মায়েদা, ৪৬)

ইঞ্জিল মূলত তাওরাতের পরিপূরক ছিল, যেখানে আল্লাহর প্রেম, দয়া ও ক্ষমার বাণী প্রচার করা হয়েছিল।

 

ইঞ্জিলের মূল শিক্ষা

ইঞ্জিল ছিল আল্লাহ প্রেম,মানবতা, ক্ষমা ও ঈমানের শিক্ষা দিয়ে পরিপূর্ণ। হজরত ঈসা আ. মানুষকে সত্যের পথে ডাকতেন , তাদের হৃদয়ে আল্লাহর ভালোবাসা জাগ্রত করতেন। তিনি বলতেন—

তোমরা আল্লাহকে এক বলে মানো, তাঁকে ভালোবাসো , একমাত্র তাঁর ইবাদত করো। তাঁর যুগের ইহুদি পুরোহিতগণ যখন ধর্মকে ব্যবসার মাধ্যম বানিয়ে ফেলেছিল, তখন হজরত ঈসা আ. তাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। তিনি অসহায়, দরিদ্র ও নিপীড়িত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন, সমাজের শোষিতদের মুক্তির কথা বলেছিলেন।

 

ইঞ্জিলের বিকৃতি ও নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ভবিষ্যদ্বাণী

দুঃখজনকভাবে, হজরত ঈসা আ.-এর আসমানি কিতাব ইঞ্জিল ধীরে ধীরে বিকৃত হতে শুরু করে। তাঁর অনুসারীদের মধ্যে একদল লোক নিজেদের স্বার্থে ইঞ্জিলের শিক্ষাকে পরিবর্তন করতে থাকে। ফলে মূল ইঞ্জিল হারিয়ে যায় , বিভিন্ন সংস্করণ তৈরি হয়। তবে, ইঞ্জিলে এক গুরুত্বপূর্ণ ভবিষ্যদ্বাণী ছিল, একজন শেষ নবীর আগমনের সংবাদ। আল্লাহ বলেন—

আমি তোমাদের কাছে এমন এক রাসূলের সুসংবাদ দিচ্ছি, যাঁর নাম আহমাদ। (সূরা আস-সাফ, আয়াত : ৬)

এই ভবিষ্যদ্বাণী পূর্ণ হয়েছিল হজরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আবির্ভাবের মাধ্যমে, যিনি চূড়ান্ত ও সর্বশেষ নবী হিসেবে আসেন, আল্লাহ তায়ালা তাঁর ওপর চূড়ান্ত ও সংরক্ষিত কিতাব আল-কোরআন নাজিল করেন।

 

ইঞ্জিল ও কোরআন, এক সত্যের ধারাবাহিকতা

ইঞ্জিলের মূল বার্তাগুলো আজও কোরআনে সংরক্ষিত আছে। তবে বর্তমান যুগের খ্রিস্টানদের কাছে যে বাইবেল রয়েছে, তা আল্লাহর মূল ইঞ্জিল নয়; বরং মানুষের সংযোজন ও পরিবর্তিত লেখা। কোরআন হলো সেই একমাত্র গ্রন্থ, যা আল্লাহ নিজেই সংরক্ষণের দায়িত্ব নিয়েছেন। আল্লাহ বলেন—

আমিই এই কিতাব (কোরআন) নাজিল করেছি , আমিই একে সংরক্ষণ করব। (সূরা আল-হিজর, আয়াত : ৯)

হজরত ঈসা আ. ছিলেন আল্লাহর প্রেরিত এক মহান নবী, যার ওপর ইঞ্জিল নাজিল হয়েছিল। তিনি মানুষকে আল্লাহর পথে ডাকতেন, দয়ার শিক্ষা দিতেন , সমাজের অত্যাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতেন। কিন্তু তাঁর আসমানি কিতাব মানুষ বিকৃত করে ফেলে, ফলে আল্লাহ তায়ালা সর্বশেষ ও পূর্ণাঙ্গ ধর্ম ইসলামের মাধ্যমে মানবজাতিকে চূড়ান্ত হেদায়াত দেন।

আজকের দিনে, ইঞ্জিলের প্রকৃত শিক্ষা পেতে হলে আমাদের কোরআনের দিকে তাকাতে হবে, কারণ কোরআনই একমাত্র বিশুদ্ধ ও সংরক্ষিত আসমানি কিতাব, যা চিরন্তন সত্যের ধারক ও বাহক।

 

লেখক: শিক্ষক, মারকাযুস সুন্নাহ মাদরাসা মাতুয়াইল ডেমরা ঢাকা

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category

পুরাতন সংবাদ পড়ুন

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০  
© All rights reserved
ওয়েবসাইট ডিজাইন : ইয়োলো হোস্ট