1. shadhinsomoy.com@gmail.com : স্বাধীন সময় : স্বাধীন সময়
  2. info@www.shadhinsomoy.com : স্বাধীন সময় :
সোমবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৫, ০৮:১১ অপরাহ্ন

হজের যেসব আমল ও স্থান ইবরাহিম (আ.) এর স্মৃতিবিজড়িত

  • Update Time : সোমবার, ২৮ এপ্রিল, ২০২৫

হজ ইসলামের এক অনন্য মহান ইবাদত। এর মাধ্যমে মুমিনের হৃদয়ে আল্লাহর প্রতি পরিপূর্ণ আনুগত্য ও ভালোবাসার অম্লান স্বাক্ষর অঙ্কিত হয়। এই ইবাদত নির্দিষ্ট সময় ও নির্ধারিত পবিত্র ভূমিতে নির্ধারিত কর্মপন্থার আলোকেই সম্পাদন করতে হয়। কারণ, হজের প্রতিটি স্তম্ভ, প্রতিটি ধাপ, আলাদা করে এক একটি স্মরণীয় নিদর্শন, যা সরাসরি নবী ইবরাহিম (আ.) ও তাঁর পবিত্র পরিবারকে স্মরণ করায়।

হজ ফরজ হয় এমন সৌভাগ্যবান মুমিনের ওপর, যারা শারীরিক, আর্থিক ও পারিবারিক সামর্থ্যে পরিপূর্ণ। যাদের পক্ষে পবিত্র ভূমিতে পৌঁছানো, সেখানে অবস্থান করা এবং পরিবারের প্রয়োজনীয় রসদ সংস্থান বজায় রাখা সম্ভব। আর এই ফরজ ইবাদত জীবনে একবারই পালন করা অপরিহার্য।

হজের প্রতিটি আনুষ্ঠানিকতা যেন নবী ইবরাহিম (আ.)-এর অবিচল বিশ্বাস, হাজেরা (আ.)-এর অশ্রুসিক্ত দৃঢ়তা এবং ইসমাইল (আ.)-এর পরম আত্মত্যাগের অবিনশ্বর প্রতিচ্ছবি। কাবা শরিফের তাওয়াফ থেকে শুরু করে সাফা-মারওয়ার সাঈ, আরাফার ময়দানে চোখের পানিতে ভেজা দোয়া সবকিছুতেই ফুটে ওঠে প্রভুর প্রতি প্রেমের অমোচনীয় ইবারত।

হজ, তাই কেবল একটি ইবাদত নয়; বরং ইমানের শুদ্ধতম প্রকাশ, ভালোবাসার সর্বোচ্চ উচ্চারণ এবং পরম আনুগত্যের এক অমর অধ্যায়।

কাবা শরীফ নির্মাণ: আনুগত্যের অমর নিদর্শন

হজের মূল কেন্দ্রবিন্দু কাবা শরীফ নির্মিত হয়েছে ইবরাহিম (আ.) ও তাঁর পুত্র ইসমাইল (আ.)-এর পবিত্র হাতে। তারা আল্লাহর আদেশে পবিত্র কাবার ভিত্তি স্থাপন করেন। কোরআনুল কারিমে ইরশাদ হয়, আর যখন ইবরাহিম ও ইসমাইল কাবার ভিত্তি স্থাপন করছিল, তখন বলছিল; হে আমাদের রব! তুমি আমাদের পক্ষ থেকে (এ কাজ) গ্রহণ করো। নিশ্চয়ই তুমি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ। (সূরা আল-বাকারা, আয়াত : ১২৭)

কাবার নির্মাণের সময় তাঁদের দোয়া ইবাদতের প্রকৃত রূহ প্রকাশ করে, যা আজও হাজীদের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস। ইবরাহিম (আ.)-এর নির্মিত কাবা হলো পৃথিবীর সর্বপ্রথম ইবাদতের ঘর। (সূরা আলে ইমরান, আয়াত : ৯৬)

মাকামে ইবরাহিম

পবিত্র কাবাগৃহের নিকটে অবস্থিত এক ইতিহাসভাস্কর নিদর্শন। এটি সেই পাথর, যার ওপর দাঁড়িয়ে আল্লাহর খলিল ইবরাহিম (আলাইহিস সালাম) নিজ হাতে কাবা নির্মাণ করেছিলেন, তাঁর পবিত্র মকবুল শ্রমের চিরন্তন স্মারক।

কাবার ইট পাথর যত ওপরে উঠত, ইবরাহিম (আ.) দাঁড়িয়ে থেকে কাজ চালিয়ে যেতেন, আর তাঁর পুণ্যময় পায়ের চাপ সেই পাথরে অম্লান চিহ্ন হয়ে থেকে যায়। আজও সেই পদচিহ্নবিশিষ্ট পাথর মক্কা মুকাররমার বুকে অপরাজেয় স্বাক্ষর হয়ে টিকে আছে, যুগ যুগ ধরে হাজিদের হৃদয় ছুঁয়ে দিয়ে যাচ্ছে। তাওয়াফ শেষ করে এই মাকামে ইবরাহিমের পিছনে দুই রাকাত নামাজ আদায় করা সুন্নত, যা এক অমূল্য আত্মিক সাধনা।

আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে এই স্মরণীয় ঘটনার উল্লেখ করে ইরশাদ করেন, স্মরণ করো সে সময়কে, যখন আমি কাবাকে মানবজাতির মিলনকেন্দ্র ও নিরাপত্তার স্থান করেছিলাম এবং নির্দেশ দিয়েছিলাম, তোমরা মাকামে ইবরাহিমকে নামাজের স্থানরূপে গ্রহণ করো। (সুরা বাকারা, আয়াত: ১২৫)

মাকামে ইবরাহিম তাই কেবল একটি পাথর নয় বরং তা নবী ইবরাহিমের সৌরভমাখা এক জীবন্ত দলিল, যা আসমান-জমিনের মালিকের প্রতি ইবরাহিম (আ.)-এর নিরবচ্ছিন্ন আনুগত্য, ত্যাগ ও ভালোবাসার সাক্ষ্য বহন করে চলছে কিয়ামত পর্যন্ত।

সাফা-মারওয়া সাঈ : হাজেরা (আ.)-এর ত্যাগময় স্মৃতি

হজের গুরুত্বপূর্ণ অংশ ‘সাঈ’ সাফা ও মারওয়া পাহাড়ের মধ্যবর্তী দৌড় সরাসরি ইবরাহিম (আ.)-এর জীবনকাহিনীর সঙ্গে যুক্ত। যখন তিনি আল্লাহর নির্দেশে তাঁর স্ত্রী হাজেরা (আ.) ও শিশু পুত্র ইসমাইল (আ.)-কে নির্জন মরুভূমিতে রেখে আসেন, তখন পিপাসায় কাতর শিশুর জন্য পানির সন্ধানে হাজেরা (আ.) বারবার সাফা ও মারওয়া পাহাড়ের মাঝে ছুটে বেড়ান।

আল্লাহ বলেন, নিশ্চয়ই সাফা ও মারওয়া আল্লাহর নিদর্শনগুলোর অন্তর্ভুক্ত..(সূরা আল-বাকারা, আয়াত :১৫৮)
বর্তমান সময়ে এসেও মুসলমানেরা হাজেরা (আ.)-এর সেই ধৈর্য ও আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসের স্মরণে  সাঈ করেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, সাঈ করা হয়েছে যেন আল্লাহর স্মরণ করার জন্য। (সহীহ মুসলিম, হাদিস: ১২১৭)

জমজম কূপ: আল্লাহর রহমতের উন্মেষ

হজের আরেক গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো জমজমের পানি পান করা। হাজেরা (আ.)-এর ব্যাকুলতার সময় আল্লাহ তায়ালা ইসমাইল (আ.)-এর গোড়ালির আঘাতে জমিন থেকে পবিত্র জমজমের পানি ফোয়ারা বের করেন।

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জমজম সম্পর্কে বলেন,  জমজমের পানি যে উদ্দেশ্যে পান করা হবে, তা পূর্ণ হয়। (সুনান ইবনু মাজাহ, হাদিস: ৩০৬২) আজও জমজম মুসলমানদের জন্য রহমত ও বরকতের প্রতীক।

মিনার কোরবারি: সর্বোচ্চ আত্মত্যাগের পরীক্ষা

হজের অন্যতম আমল হলো কোরবানী করা, যা ইবরাহিম (আ.)-এর ঈমান ও আত্মত্যাগের অনন্য উদাহরণ। আল্লাহ তায়ালা বলেন, আমি তাঁকে স্বপ্নে নির্দেশ দিলাম যে, তুমি তোমার পুত্রকে কোরবানী করো। তখন ইসমাইল বললেন—

হে পিতা! আপনি যা আদিষ্ট হয়েছেন, তাই করুন; ইনশাআল্লাহ আপনি আমাকে ধৈর্যশীলদের অন্তর্ভুক্ত পাবেন। (সূরা সাফফাত, আয়াত :১০২)

শেষপর্যন্ত আল্লাহ তায়ালা ইসমাইল (আ.)-এর পরিবর্তে একটি প্রাণী পাঠিয়ে তাঁকে মুক্ত করেন। আজও সেই স্মৃতির ধারাবাহিকতায় মুসলিম উম্মাহ কোরবানী করে থাকে। এই ঘটনার স্মরণে হাদিসে এসেছে—

হজের দিনগুলোতে সবচেয়ে উত্তম কাজ হলো পশু কোরবানি করা। (মুসনাদ আহমাদ, হাদিস: ১৯৬৫৫)

শয়তানকে পাথর নিক্ষেপ: সত্যের দৃঢ় সংকল্প

হজের আরেক আমল হলো ‘রমি জামারাত’ শয়তানকে পাথর নিক্ষেপ করা। ইবরাহিম (আ.) যখন পুত্র কোরবানি করতে যাচ্ছিলেন, তখন শয়তান তাঁকে পথভ্রষ্ট করার চেষ্টা করে। ইবরাহিম (আ.) আল্লাহর আদেশের প্রতি অবিচল থেকে শয়তানকে পাথর নিক্ষেপ করেন। এই ঘটনাকে স্মরণ করে হাজীরা মিনার তিনটি জামারাতে পাথর নিক্ষেপ করেন।
রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, তোমরা পাথর নিক্ষেপ করো, কারণ তা শয়তানকে লাঞ্ছিত করা এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের মাধ্যম। (সুনান তিরমিজি, হাদিস: ৯০২)

হজের প্রতিটি রুকন, প্রতিটি স্থান ইবরাহিম (আ.) ও তাঁর পরিবারের আত্মত্যাগ, ধৈর্য, আল্লাহর প্রতি সম্পূর্ণ আত্মসমর্পণ ও ঈমানের উজ্জ্বল নিদর্শন বহন করে। তাঁর জীবন যেন হজের প্রতিটি পর্বে জীবন্ত হয়ে ওঠে। আল্লাহ বলেন—

নিশ্চয়ই ইবরাহিম ছিলেন একা এক জাতি, আল্লাহর প্রতি একনিষ্ঠ আনুগত্যশীল এবং তিনি কখনও মুশরিক ছিলেন না।
(সূরা আন-নাহল, আয়াত :১২০)

ইবরাহিম (আ.)-এর জীবনের সেই অনুপম শিক্ষাই হজের রীতিনীতিতে মিশে আছে—যা যুগে যুগে মুমিনের হৃদয়ে ঈমানের দীপ্তি ছড়িয়ে দেয়।

লেখক: শিক্ষক, মারকাযুস সুন্নাহ মাদরাসা মাতুয়াইল, ডেমরা,ঢাকা।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category

পুরাতন সংবাদ পড়ুন

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০  
© All rights reserved
ওয়েবসাইট ডিজাইন : ইয়োলো হোস্ট