অর্থনৈতিক প্রতিবেদকঃদুই সপ্তাহ ধরে পেঁয়াজের বাজার অস্থির। কেজিতে বেড়েছে ২০ টাকা পর্যন্ত। দেশি পেঁয়াজের দর বেশি বাড়তে থাকায় এর প্রভাব পড়ছে আমদানি পেঁয়াজের ওপর। যদিও প্রতিদিন শত শত ট্রাক পেঁয়াজ ঢুকছে দেশে।
ব্যবসায়ীরা জানান, প্রতিবছর এ সময় দেশি পেঁয়াজের মজুত ফুরিয়ে আসে। এ কারণে দর বাড়ে। দেশি পেঁয়াজের এই ঘাটতি মেটাতে মূল ভরসা হয়ে ওঠে আমদানি পেঁয়াজ। তবে আমদানিকারকদের কেউ কেউ বলছেন, পেঁয়াজ নিয়ে শত শত ট্রাক ঢুকলেও বন্দরে দর বেশি।
বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) রাজধানীর বিভিন্ন খুচরা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, দেশি পেঁয়াজের তুলনায় আমদানি করা পেঁয়াজ বেশি বিক্রি হচ্ছে। বেশিরভাগ দোকানেই দেশি পেঁয়াজ নেই, তারা আমদানি করার পেঁয়াজ বিক্রি করছে প্রতি কেজি ১৩০ টাকায়। এছাড়া কিছু কিছু খুচরা দোকানে দেশি পেঁয়াজ পাওয়া যাচ্ছে যেগুলো প্রতি কেজি ১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
রাজধানীর মগবাজার এলাকার বিভিন্ন দোকান ঘুরে পেঁয়াজ কিনেছেন বেসরকারি চাকরিজীবী ফজলুল হক। বেশি দামে পেঁয়াজ কিনে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, দীর্ঘ দিন ধরে পেঁয়াজের দাম বাড়তি যাচ্ছে, এখন এসে আরেক দফা বেড়েছে। কিন্তু দাম নিয়ন্ত্রণে বাজারে কোনো পদক্ষেপ দেখছি না সংশ্লিষ্টদের। যে যার মতো করে দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে, কিন্তু দেখার নেই। আজ বাজারে দেশি পেঁয়াজ বাধ্য হয়ে ১৫০ টাকা কেজি দরে কিনলাম, আর আমদানি করা পেঁয়াজ ১৩০ টাকা কেজিতে বিক্রি হতে দেখলাম। এতো যদি দাম হয় তাহলে আমরা সাধারণ মানুষ কীভাবে পেঁয়াজ কিনে খাবো?
একই বাজারের আরেক ক্রেতা আফতাব উদ্দিন কিনেছেন আধা কেজি পেঁয়াজ। তিনি বলেন, এত বেশি দাম তাই বাধ্য হয়ে আধা কেজি কিনলাম। আবার যদি পেঁয়াজ ছাড়া রান্না করা সম্ভব হতো তাহলে এতো দামের পেঁয়াজ কিনতামই না। বাজার পেঁয়াজের দাম অনেক বেশি, আমরা যারা নিম্ন আয়ের মানুষ তারা কীভাবে এই পেঁয়াজ কিনবো? আমাদের কথা কেউ ভাবে না। আমদানি করা পেঁয়াজের দাম কেজিতে ২০ টাকা কম দেখে এটাই আধা কেজি কিনেছি।
পেঁয়াজের বাড়তি দাম বিষয়ে রামপুরা এলাকায় খুচরা পেঁয়াজ বিক্রেতা মোতালেব মিয়া জানান, পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের দাম বেশি, তাই বেশি দামে কেনা পড়ছে আমাদের। আসলে এই সময় বাজারে দেশি পেঁয়াজের সরবরাহ অনেক কম, আর বাজারে আমদানি করা পেঁয়াজ থাকলেও সরবরাহ বাজারে কম। আমরা খুচরা বাজারে দেশি পেঁয়াজ ১৫০ টাকা আর আমদানি করা পেঁয়াজ ১২০ টাকায় বিক্রি করছি। দাম বাড়ার পর থেকে আমাদের ব্যবসা খারাপ যাচ্ছে, বিক্রি কমে গেছে পেঁয়াজ। আগে যদি ক্রেতারা এক কেজি পেঁয়াজ কিনতো দাম বাড়ার পর এখন কিনছে আধা কেজি। আবার যেই ক্রেতা ৫ কেজি কিনতো সে কিনছে ২ কেজি। দাম বাড়ার পর এভাবে আমাদের বিক্রি কমে গেছে।
কারওয়ান বাজারের এক পেঁয়াজ বিক্রেতা আলমগীর হোসেন বলেন, বছরের এই সময় এসে বাজারে পেঁয়াজ সরবরাহ কম থাকে। চাহিদার তুলনায় এখন বাজারে পেঁয়াজের জোগান কমেছে। বৈরী আবহাওয়ার কারণে বাজারে মুড়িকাটা পেঁয়াজ আসতে দেরি হচ্ছে, আর কৃষকের কাছে আগের পেঁয়াজ মজুদ নেই। অন্যদিকে পেঁয়াজ আমদানিও বাড়েনি, সব মিলিয়ে বাজারে চাহিদার তুলনায় দেশি ও আমদানি করা দুই ধরনের পেঁয়াজের সরবরাহ কম, যে কারণে বেড়েছে পেঁয়াজের দাম।
সরকারি সংস্থা ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) বলছে, মাসের ব্যবধানে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ২৭.২৭ শতাংশ বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। গত বছর একই সময়ের তুলনায় ৪০ শতাংশ বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে পেঁয়াজ। পাশাপাশি আমদানি করা পেঁয়াজ এক মাসে বেড়েছে ২.২৬ শতাংশ ও গত বছর একই সময়ের তুলনায় পেঁয়াজ ২৫ শতাংশ বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।
Leave a Reply