একদিকে রাজনৈতিক দলগুলো চাইছে যৌক্তিক সময়ে নির্বাচন, অন্যদিকে সাধারণ মানুষের চাওয়া দ্রব্যমূল্যর ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণ। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার তিন মাস পর রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, রাষ্ট্র সংস্কারসহ অনেক ক্ষেত্রে অন্তর্বর্তী সরকার ধীর গতিতে এগোচ্ছে। আর সরকার এখন পর্যন্ত কোনো রোডম্যাপ দিতে পারেনি বলে অভিযোগ রাজনীতিবিদদের।
জুলাই-আগস্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলনের মুখে ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা। ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেন শান্তিতে নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার তিন মাস পেরোনোর পর এখন সবার মনেই প্রশ্ন, গণঅভ্যুত্থানের মধ্যে দিয়ে আসা এই সরকার কি মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারছে?
দ্রব্যমূল্য, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি, প্রশাসনে অস্থিরতা, রাজনৈতিক বিতর্ক—সবমিলিয়ে আলোচনা-সমালোচনা চলছে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের শুরু থেকেই। এরইমধ্যে নির্বাচন ব্যবস্থাসহ রাষ্ট্র সংস্কারে বিভিন্ন কমিশন গঠিত হয়েছে। কিন্তু এই কমিশনগুলোর কাজের গতি নিয়ে সন্তুষ্ট নন রাজনীতিবিদরা। বিশ্লেষকরা বলছেন, রাজনৈতিক দলগুলোর এই সরকারের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হচ্ছে।
বিশ্লেষক সোহরাব হাসান এ বিষয়ে বলেছেন, জনজীবনের সমস্যা সমাধান করতে পারলেই কিন্তু মানুষ আশ্বস্ত হবে, এই সরকার পরিবর্তনে তাদের ভেতরে স্বস্তি ফিরে এসেছে। এছাড়া রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের মধ্যে যে দূরত্ব, সেটি কমানো উচিত বলেও মনে করেন তিনি।
বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলছেন, অনেকগুলো কর্মকাণ্ড মানুষের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। মানুষ হতাশ হচ্ছে। এটা তো অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, তাদের অন্তরের কথা কিন্তু আমরা বুঝতে পারছি না, তারা কী করতে চায়।
এদিকে, প্রশাসনে রদবদলেও কোনো স্থিরতা নেই বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। তিনি বলেন, একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিকে প্রশাসনের একটা পদে দিলে, সে যদি দেখে আর একটা গুরুত্বপূর্ণ পদে একজনকে দিয়ে পরে আবার প্রত্যাহার করেছে, তখন সে তো কাজ করার ব্যাপারে তত উৎসাহিত হবে না।
তিনি আরও বলেন, যদি এই সরকার এই প্রক্রিয়া সম্পর্কে পরিষ্কার না করে যে এই নির্বাচনটা পরিচালনা করবেন কে, তো এই ব্যাপারও তো বাকি আছে। সরকারের কাছে পরামর্শ, অতি দ্রুত এই সমস্যাগুলো সমাধানের রূপরেখা এবং রোডম্যাপ দেওয়া উচিত।
যৌক্তিক সময়ের মধ্যে নির্বাচন এখন গণমানুষের চাওয়া বলে মনে করছেন বিএনপির আরেক স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেন, এই ট্রাঞ্জেশনটা যত তাড়াতাড়ি হয়, জনগণের ক্ষমতায়ন হবে, জনগণ সিদ্ধান্ত নেবে বাংলাদেশ কোনদিকে যাবে। এটাই হচ্ছে সবচেয়ে বড় প্রায়োরিটি। এমনিতে যদি কিছু সংস্কারের প্রয়োজন হয়, যেখানে ঐক্যমত্য থাকবে, সেখানে ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে সংস্কার করাই যায়।
Leave a Reply