1. shadhinsomoy.com@gmail.com : স্বাধীন সময় : স্বাধীন সময়
  2. info@www.shadhinsomoy.com : স্বাধীন সময় :
রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫, ০৭:১১ অপরাহ্ন
Title :
ফ্রিজের আড়ালে লুকাতে গিয়ে বিদ্যুৎতায়িত হয়ে ২ বোনের মৃত্যু প্রধান উপদেষ্টার কাছে স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন জমা শান্তিরক্ষা মিশনে নারীর অংশগ্রহণ বাড়ানোর আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদা পেতে যাচ্ছেন চসিক মেয়র ডা. শাহাদাত ১৯ দিনে এলো ২১ হাজার কোটি টাকার রেমিট্যান্স মোবাইল ব্যবহার করতে না দেওয়ায় অভিমানে কিশোরের আত্মহত্যা ৩ মে মহাসমাবেশের ডাক হেফাজতে ইসলামের গ্লোবাল স্ট্রাইক ফর গাজাতে বাধা ডা. আলগিনকে অ্যাকাডেমিক-প্রশাসনিক কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি জিএম কাদের সরকার দেশের ৫০ ভাগ মানুষকে বাদ দিয়ে সংস্কার প্রস্তাব করছে সাতক্ষীরায় পরিত্যক্ত পুকুরে মিলল ৩৪ দেশীয় অস্ত্র

যে কারণে ভারতের রাজধানী দিল্লি থেকে সরানোর কথা উঠছে

  • Update Time : রবিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৪

আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ বোমাটা সদ্যই ফাটিয়েছেন শশী থারুর। ভারতের শীর্ষস্থানীয় রাজনীতিবিদদের একজন, জাতিসংঘের সাবেক আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল ও দেশের সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী, জনপ্রিয় লেখক ও চিন্তাবিদ থারুরের দেওয়া প্রস্তাবটা নিয়ে ভারতের সোশ্যাল মিডিয়াতে রীতিমতো ঝড় বইছে!দুদিন আগে নিজের ভেরিফায়েড এক্স হ্যান্ডল থেকে শশী থারুর পোস্ট করেন, পুরো নভেম্বর থেকে মার্চ মাস যে শহরটা কার্যত বাসযোগ্য থাকে না, আর বছরের বাকি সময়টাও কোনো রকমে টিকে থাকা যায়- সেই শহরটার আদৌ কি দেশের রাজধানী থাকা উচিত? যারা এখনও বিষয়টা ধরতে পারেননি তাদের জানানো যাক- শশী থারুর দিল্লির শীতে কুখ্যাত দূষণের কথাই বলছেন!

থারুর যে দিন এটা টুইট করেন (১৮ নভেম্বর, সোমবার), সেটা ছিল দিল্লির ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দূষিত দিন – শহরের গড় ‘একিউআই’ (এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স) সে দিন ছিল ৪৯৪, যা ‘বিপজ্জনক’ মাত্রার চেয়েও চার-পাঁচগুণ বেশি। পরদিন সকালে দিল্লির প্রভাতী খবরের কাগজগুলোর প্রধান শিরোনাম ছিল অনেকটা এরকম : দ্য হিন্দুস্থান টাইমস লিখেছিল ‘ম্যাক্সিমাম টক্সি-সিটি’, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের ভাষ্য ছিল ‘দিল্লি ব্রিদস পয়সন’ (দিল্লি বিষ-শ্বাস নিচ্ছে) আর টাইমস অফ ইন্ডিয়া জানিয়েছিল যবে থেকে আবহাওয়ার রেকর্ড রাখা হচ্ছে, তার মধ্যে দিল্লিতে এর চেয়ে খারাপ দিন মাত্র একবারই এসেছে!

এরকম একটা শহর আসলেই ভারতের রাজধানী হওয়ার যোগ্য কি না– কিংবা শীতে দেশের রাজধানী অন্য কোথাও সরিয়ে নেওয়াটা সমীচীন কি না– সেই প্রশ্নটা ওঠা তাই বোধহয় মোটেই অস্বাভাবিক নয়। শীত পড়তে না পড়তেই যে শহরটা পুরু কালো ধোঁয়াশা বা ‘স্মগে’র আস্তরণে ছেয়ে যায়, বাস-ট্রেন-গাড়ি-বিমানের চলাচল লণ্ডভণ্ড হয়ে যায়, কয়েক কোটি দিল্লিবাসী খুসখুসে কাশি আর নাকমুখ জ্বালা জ্বালা করার উপসর্গে ভুগতে শুরু করেন এবং ভারতের রাজধানী প্রায় নিয়ম করে বিশ্বের দূষিততম শহরের তালিকায় শীর্ষস্থান দখল করে থাকে– সেখানে এই বিতর্কটা বোধহয় অনেক আগেই শুরু হওয়া উচিত ছিল।

শশী থারুর কেরালার তিরুবনন্তপুরম থেকে টানা চারবারের নির্বাচিত কংগ্রেস এমপি, এবং দক্ষিণ ভারতের একজন সাংসদ একথা বলছেন বলেই কি না কে জানে– অনেকেই তার প্রস্তাব লুফে নিয়ে পরামর্শ দিচ্ছেন, ভারতের রাজধানীটা বরং চেন্নাই বা হায়দ্রাবাদের মতো দক্ষিণের কোনও শহরেই সরানো উচিত হবে। যথারীতি এর বিরোধিতাও আছে প্রবল, দিল্লির যতই সমস্যা থাক– বিশেষত উত্তর ভারতীয়রা অনেকেই চান না দিল্লি থেকে রাজধানী সরানোর ভাবনা এমনকি আলোচনাতেও আসুক! তবে দূষণের কারণে কোনও দেশে রাজধানী সরানোর প্রস্তাব কিন্তু এটাই প্রথম নয়– বস্তুত পৃথিবীর একটি অন্যতম জনবহুল দেশ তো বিভিন্ন পরিবেশগত কারণে তাদের রাজধানী প্রায় ১০০০ কিলোমিটার দূরে নতুন একটি শহরে সরিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেলেছে।

পাশাপাশি দূষণের যে তালিকায় দিল্লি নিয়ম করে শীর্ষে, সেই একই তালিকায় কিন্তু মোটেই পিছিয়ে নেই বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাও। কিংবা পাকিস্তানের অন্যতম প্রধান শহর লাহোরও। বস্তুত শশী থারুর যে দিন বিশ্বের সবচেয়ে দূষিততম শহরগুলোর তালিকা টুইট করেছেন, সে দিনের হিসেবে দিল্লির ঠিক পরেই দ্বিতীয় স্থানে এসেছে ঢাকা। তিন নম্বরে পাকিস্তানের লাহোর, চারে বসনিয়া-হার্জেগোভিনার সারাজেভো আর পাঁচে ইরাকের বাগদাদ। তবে থারুর এটাও জানাতে ভোলেননি, ঢাকা তালিকায় দু’নম্বরে এলেও দিল্লির দূষণের মাত্রা কিন্তু ঢাকার অন্তত পাঁচগুণ বেশি। অবশ্য বাংলাদেশের রাজধানীতেও যেভাবে দূষণের মাত্রা ক্রমাগত বেড়েই চলেছে, তাতে সেখানেও একদিন রাজধানী অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার সিরিয়াস দাবি উঠতে শুরু করলেও বোধহয় অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না!

এ সপ্তাহে দিল্লির দূষণ নিয়ে বিবিসি অনলাইনে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনের শিরোনাম করা হয়েছে, দিল্লির এই মারাত্মক স্মগে বেঁচে থাকাটাই যেন একটা ‘ডিসটোপিয়ান’ সিনেমা বারবার দেখে যাওয়ার মতো বিষয়। ডিসটোপিয়া বলতে বোঝায় দুর্দশা, আতঙ্ক বা অবিচারের একটা কাল্পনিক জগৎ- কিন্তু দিল্লিবাসীর জীবনে সেই দুঃস্বপ্নই যেন বছরের পর বছর ধরে বারবার সত্যি হয়ে ফিরে আসছে। প্রতিবার নভেম্বর এলেই দিল্লিতে এই মারাত্মক সমস্যা শুরু হয়ে যায়, কীভাবে এর প্রতিকার সম্ভব তা নিয়ে দিস্তে দিস্তে লেখালেখি আর তুমুল তর্কবিতর্ক হতে থাকে, রাজনীতিবিদরা পরস্পরকে দোষারোপ করতে থাকেন– কিন্তু শেষ পর্যন্ত আর কোনো সমাধান বের হয় না!

গত কয়েক বছরে দিল্লি দূষণের মোকাবিলায় এক দিন জোড়, আর অন্য দিন বেজোড় নম্বরের গাড়ি চালানোর এক্সপেরিমেন্ট করেছে, শহরের বড় বড় ব্যস্ত মোড়ে ‘ক্লিন এয়ারে’র মেশিন বসিয়েছে, পার্শ্ববর্তী রাজ্য পাঞ্জাব বা হরিয়ানার কৃষকদের ফসলের গোড়া জ্বালানো থেকে নিরস্ত করতে নানা ধরনের ব্যবস্থা নেয়ার চেষ্টা করেছে। দু’দিন আগে দিল্লির আম আদমি পার্টি সরকার তো কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে ‘ক্লাউড সিড’ করে রাজধানীতে কৃত্রিম বৃষ্টি ঘটানোরও অনুমতি চেয়েছে, যদিও তাদের কাছে সেই প্রযুক্তি আদৌ আছে কি না সেটাই স্পষ্ট নয়।

তবে বাস্তবতা হলো নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেও কিছুতেই কিছু হয়নি– প্রতি বছরই দিল্লিতে দূষণ আবার ফিরে এসেছে! শহরের আকাশটা সামান্য পরিষ্কার হলে বা কালো ধোঁয়াশার আস্তরণ ভেদ করে সামান্য রোদের ঝিলিক দেখা গেলেই সবাই যেন দূষণের কথা একেবারে ভুলে যায়, দিল্লি আরও হাজারটা সমস্যা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। প্রতি বছর অক্টোবরের শেষ বা নভেম্বরের গোড়া থেকে শহরকে যে কী দুঃসহ যন্ত্রণার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়, দিল্লির তখন যেন তা আর মনেই পড়ে না। এজন্যই বিবিসি বলছে, দিল্লির দূষণে বাঁচাটা যেন সেই বিষাদময় ছায়াছবিটা এক বিরামহীন চক্রে বারবার দেখে যাওয়ার মতো ব্যাপার!

এই বছরেও দেখা যাচ্ছে গত বেশ কিছুদিন ধরেই দিল্লিতে পার্কগুলো ফাঁকা, বাচ্চারা আর সেখানে খেলতে আসছে না। বিশেষ করে বৃদ্ধ ও শিশুদের ঘরের ভেতরে থাকতে বলা হচ্ছে। সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে যাদের ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’ করা সম্ভব, তাদের বাড়িতে থেকেই কাজ করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তবে দিন-এনে-দিন-খাওয়া শ্রমিকরা, যেমন অটোরিক্সা বা ট্যাক্সি চালক, ডেলিভারি বয়– এদের যেহেতু রুটিরুজির জন্য রাস্তায় বেরোতেই হয়, তাই তাদের কাশতে কাশতে হলেও কাজে নামতে হচ্ছে। ইতোমধ্যে হাসপাতাল বা ক্লিনিকগুলোতে শ্বাসকষ্টে ভোগা রোগীদের সংখ্যা এক লাফে অনেকটা বেড়ে গেছে। প্রতি বছরের এই চেনা ছবিটা ফিরে আসতেই সেই পুরনো প্রশ্নটাও আবার উঠে আসছে– কেন দিল্লিতে কিছুই পাল্টায় না?

বিবিসি এর জবাবে বলছে, এই প্রশ্নের সহজ উত্তর হলো দিল্লিতে দূষণ ঠেকাতে হলে আসলে দরকার ‘পাহাড়প্রমাণ চেষ্টা আর বিপুল সমন্বয়’– যেটা আজ পর্যন্ত করে ওঠা যায়নি। যেমন, এই দূষণের সমস্যার একটা বড় উৎস হলো ‘পরালি’ জ্বালানো। হিন্দিতে ‘পরালি’ বলে ফসলের গোড়ার দিকটাকে, ক্ষেতের ফসল কেটে নেওয়ার পর যে শক্ত অংশটা মাটিতে রয়ে যায়। এখন দিল্লির আশেপাশে পাঞ্জাব, হরিয়ানা বা উত্তরপ্রদেশের কৃষকদের শীতের শুরুতে ক্ষেতে নতুন ফসল রোপণ করার আগে এই পরালিটা সরিয়ে ফেলতে হয়, আর আগুন দিয়ে সেটা জ্বালিয়ে দেওয়াই তাদের জন্য সবচেয়ে সস্তা ও সহজ উপায়।

পরালি-পোড়ানো সেই কালো ধোঁয়ার আস্তরণ দিল্লির আকাশকে ছেয়ে ফেলে, আর শীতে যেহেতু বাতাসের বেগও খুব কম থাকে তাই সেই পুরু কালো চাদরটা শহরের ওপর দিনের পর দিন ধরে ঝুলতে থাকে। কিন্তু এই সংকটের জন্য গরিব চাষীদেরও পুরোপুরি দোষ দেওয়া যাবে না, কারণ পরালি জ্বালানো ছাড়া তাদের কাছে বিকল্প কোনও রাস্তা নেই– আর যেগুলো আছে, সেগুলো অনেক বেশি ব্যয়বহুল ও সময়সাপেক্ষ।

ফসলের গোড়া জ্বালানো ঠেকাতে বিগত বহু বছর ধরে নানা দলের নানা সরকার অনেক রকম প্রস্তাব এনেছে। কখনও যান্ত্রিক পদ্ধতিতে পরালি ওপরানোর মেশিন চালু করার কথা বলা হয়েছে, কৃষকদের আর্থিক ভাতা দেওয়ার প্রস্তাবও এসেছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এর কোনও সমাধানই বের করা যায়নি। তা ছাড়া দিল্লি নিজেও বিপুল পরিমাণ দূষণের উৎস– যানবাহনের ধোঁয়া, নির্মাণ কাজ ও কারখানা থেকে যার উৎপত্তি।

যার ফলে প্রত্যেকবার শীত পড়লেই দূষণে নাজেহাল দিল্লিবাসী ক্ষোভে ফুঁসতে থাকে, টিভিতে আর খবরের কাগজে গাদা গাদা রিপোর্ট বের হয়, রাজনীতিকরা একে অন্যকে দুষতে থাকেন আর আদালত সরকারকে ভর্ৎসনা করতে থাকে। এবং পরের শীতে অবিকল সেই দৃশ্যগুলোরই পুনরাবৃত্তি হয়। এবারেও তার কোনও ব্যতিক্রম হয়নি যথারীতি। বিবিসির ওই প্রতিবেদনে এ কারণেই বলা হয়েছে, “পৃথিবীর বেশিরভাগ গণতন্ত্রে এই ধরনের কোনও পাবলিক হেলথ ইমার্জেন্সি (জনস্বাস্থ্য-গত জরুরি অবস্থা) বারবার ঘটতে থাকলে তা নির্ঘাত গণঅভ্যুত্থানে রূপ নিত। কিন্তু দিল্লির ক্ষেত্রে এই ক্ষোভটা মূলত সামাজিক মাধ্যমেই সীমাবদ্ধ!”

অ্যাক্টিভিস্টরা জানাচ্ছেন, এই ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ যে এত সংযত– তার একটা বড় কারণ দূষণের কারণে বেশিরভাগ মানুষের শরীরে তাৎক্ষণিক সমস্যা কমই সৃষ্টি হয়। খুব উচ্চ মাত্রায় দূষণ-সৃষ্টিকারী পিএম ২.৫ কণা শরীরে গেলেও তা স্বাস্থ্যের ক্ষতি করতে থাকে খুব ধীরে ধীরে। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মেডিক্যাল জার্নাল ‘ল্যান্সেট’ বলছে, শুধু ২০১৯ সালেই ভারতে দূষণের কারণে ২৩ লক্ষ মানুষ সময়ের অনেক আগে মারা গেছেন।

তাছাড়া সমাজে শ্রেণি-বিভাজনও এই আপাত-নিস্পৃহতার একটা বড় কারণ। সমাজের যে অংশটা বছরের এই সময়টা দিল্লি ছেড়ে বাইরে গিয়ে থাকতে পারেন তারা সেখানেই চলে যান, যাদের সাধ্য আছে তারা বড় বড় এয়ার পিউরিফায়ার কিনে বাড়িতে বসিয়ে নেন। আর যারা সোশ্যাল মিডিয়াতে দূষণের বিরুদ্ধে লেখালেখি করতে পারেন, তারা সেটাই করেন। সমাজের যে মানুষগুলোর এগুলোর কোনওটা করারই ক্ষমতা নেই, তারা শুধু কোনওক্রমে সব সহ্য করেই জীবন চালিয়ে নেন। এই জন্যই বোধহয় দিল্লির সমবেত এই ক্ষোভ কখনও গণবিদ্রোহের রূপ নেয়নি। দেশের সুপ্রিম কোর্টও একবার বলেছিল, রাজনীতিবিদরাও শুধু ‘দোষটা অন্যের ঘাড়ে চাপিয়ে’ এই দূষণের মৌশুমটা কোনওভাবে পার করে দেওয়ার অপেক্ষায় থাকেন!

দিল্লিতে দূষণ-চিত্রের এই সার্বিক পটভূমিতেই শশী থারুরের রাজধানী সরানোর প্রস্তাব নিয়ে তর্কবিতর্ক শুরু হয়েছে। তবে ভারতে যেটা এখন শুধু ভাবনাচিন্তার স্তরে, সেই একই ধরনের প্রস্তাব নিয়ে ইন্দোনেশিয়া কিন্তু অনেক আগেই কাজ শুরু করে দিয়েছে। ইন্দোনেশিয়ার বর্তমান রাজধানী জাকার্তাতেও প্রায় ১ কোটি মানুষের বসবাস, আর দিল্লির মতো এই শহরটিও বছরের পর বছর ধরে মারাত্মক দূষণের সমস্যায় ভুগছে।

বছরের মে থেকে অগাস্ট মাস পর্যন্ত জাকার্তার বাতাস ‘অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর’ পর্যায়ে থাকে প্রায় সব সময়, হাসপাতালগুলোতে ভিড় করে আসেন শ্বাসকষ্ট বা সংক্রমণে ভোগা লোকজন। গত বছরেই (২০২৩) প্রতি মাসে জাকার্তায় গড়ে ১ লক্ষ এই ধরনের রোগী নথিভুক্ত ছিল।

জাকার্তা পোস্টের একটি রিপোর্ট অনুসারে, এই বিপজ্জনক দূষণের কারণে শিশুদের বৃদ্ধি থমকে যাচ্ছে (স্টান্টিং), সদ্যোজাতরা মারা যাচ্ছে। এর পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তনগত কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা যদি এখনকার হারে বাড়তে থাকে, তাহলে ২০৫০ সালের মধ্যে জাকার্তা শহরের এক-তৃতীয়াংশই জলের নিচে চলে যেতে পারে। এই সব কারণেই ২০২২ সালে ইন্দোনেশিয়ার পার্লামেন্ট রাজধানী জাকার্তা থেকে ‘নুসানতারা’য় স্থানান্তরিত করার জন্য একটি আইন পাশ করে। নুসানতারা নামে এই নির্মীয়মান নতুন শহরটি জাকার্তা থেকে প্রায় ১০০০ কিলোমিটার দূরে। তবে সেখানে নির্মাণকাজ সবে শুরু হয়েছে, ধারণা করা হচ্ছে পুরো স্থানান্তর ২০৪৫ সালের আগে শেষ হবে না।

ইন্দোনেশিয়া সরকার এই সুবিশাল প্রকল্পের জন্য প্রথমেই ১৫ লাখ আমলা ও সরকারি কর্মচারীকে সেখানে বদলি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ভবিষ্যতে নুসানতারার হাল যাতে জাকার্তার মতোই না-হয়, সে জন্য নতুন রাজধানীটি গড়ে তোলা হচ্ছে একটি ‘ফরেস্ট সিটি’ বা অরণ্য-নগরের আদলে। ওই শহরের দুই-তৃতীয়াংশ এলাকাতেই নতুন করে সবুজায়ন বা বৃক্ষরোপণ করা হচ্ছে। তার চেয়েও বড় কথা, ফসিল ফিউয়েল বা জীবাশ্ম-জ্বালানি নুসানতারায় সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ হবে, এই রাজধানী চলবে ১০০ শতাংশ পুনর্নবায়নযোগ্য শক্তির জোরে। ভারতের ক্ষেত্রে অবশ্য সম্পূর্ণ নতুন একটি শহরে একেবারে শূন্য থেকে শুরু করে দেশের নতুন রাজধানী এখন গড়ে তোলা প্রায় অসম্ভব বলেই বেশিরভাগ বিশেষজ্ঞ মনে করেন– তাদের মতে, যদি রাজধানী সরাতেই হয়, তা করতে হবে এখনকার বিদ্যমান কোনো মেট্রো শহরেই।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category

পুরাতন সংবাদ পড়ুন

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০  
© All rights reserved
ওয়েবসাইট ডিজাইন : ইয়োলো হোস্ট